মুকুন্দরাম
চক্রবর্তী কি দুঃখবাদী কবি?
কবিকঙ্কণ
মুকন্দরাম চক্রবর্তি মধ্যযুগের এক ব্যতিক্রমধর্মী শিল্পী।
মুকুন্দরাম
চক্রবর্তী
মধ্যযুগের বাঙালি কবি। ধারনা করা হয় তাঁর জন্ম ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম দিকে।
জন্ম: (আনু. ১৫৪০-১৬০০)
উল্ল্যেখযোগ্য
রচনা সমূহ: অভয়া মঙ্গল, তাঁর বিখ্যাত কাব্য চণ্ডীমঙ্গলকাব্য
প্রাচীন পাঁচালী রচনার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ।
খ্যাতি,
উপাধি
কবির প্রতিভার
স্বকৃতিস্বরূপ রাজা
রঘুনাথ তাকে কবি
কঙ্কন উপাধি
প্রদান করেন। তার
পূর্ণ নাম হচ্ছে
কবি কঙ্কন মুকুন্দরাম
চক্রবর্তী। তবে
এই রচনাকে কেউ
কেউ ' কবিকঙ্কণ চন্ডী'ও বলেছেন। 'কবিকঙ্কণ'
কথার মানে যে
কবি হাতে অথবা
পায়ে ঘুঙুর পরে
গান করতেন।
মধ্যযুগের
কবি কঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী বাস্তবধর্মী জীবনবাদী কবি। তিনি দেবদবী মহাত্ন্য,
মহিমা বষয়ক মঙ্গল কাব্য রচনা করলেও মর্ত মানবের সুখ দু:খ তার কব্যে ভাস্বর হয়ে
উঠেছ। নিম্ন মানবের দুখ দু:খের চিত্র অঙ্কনে তিনি সিদ্ধ হস্ত।
দু:খ
বর্ণনায় তিনি অসম্ভব সমতা, পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। সে কারনে অনেকে তাকে
দু:খবাদী কবি হিসাবে ভল করে থাকেন। তবে এটা ঠিকযে চন্ডীমঙ্গর কাব্যে এমন কতকগুলো
য়টনার নিখুত বর্ণনা আছে তাতে দু:খ গ বেদনার প্রলেপ অত্যন্ত সুস্পষ্ট।
আসলে তিনি
মর্ত প্রীতিসম্পন্ন জীবন রসিক, জীবন মুখি কবি, মর্তের মানুষের প্রতি তার অকৃত্রিম
ভালোবাসা, দু:খ পরিত্রাণের প্রতি তার সজাগ দৃষ্টি, তাই তার কব্যে জীবনের দু:খের
চিত্রন হলেও, দু:খকেই জীবনের শেষ নিয়ামক ভাবেন নি, ফলে তিনি দু:খবাদের কবি নন।
সরকার হৈল
কাল, খীল ভূমি লেখে লাল
বিনি
উপকারে খায় ধুতি।
পোতদার হৈল
যম, টাকা আড়াই আনা কম
পাই লভ্য খায়
প্রতিদিন।
ডিহিদার
অবোধ খোজ, কড়ি দিলে নাহি রোজ
ধান্য গরু
কেহ নাহি কেনে।
কবি নিজের
জীবন ও উন্মুক্ত দৃষ্টি দিয়ে যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তা কব্যে তুলে ধরেছেন।
দেশে
অরাজকতা নিরাপত্তাহীনতা, অনিশ্চিত জীবন, নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলার অক্ষ্যয় শিল্পী
বাঘিনী রুপে সিংহের উদ্দেম্য তুলে ধরেছেন।
সরকার হৈল
কাল, খীল ভূমি লেখে লাল
বিনি
উপকারে খায় ধুতি।
পোতদার হৈল
যম, টাকা আড়াই আনা কম
পাই লভ্য
খায় প্রতিদিন।
ডিহিদার
অবোধ খোজ, কড়ি দিলে নাহি রোজ
ধান্য গরু
কেহ নাহি কেনে।
কবির
ব্যক্তিগত দু:খ তাকে সমাজ অনুসন্ধানী জীবনবাদী করে তুলেছে। অত্যাচারী জমিদার
মাহমূদ শরিফের অত্যাচারে কবি জন্মভূমি ত্যাগ করেছিলেন। জন্মভূমি-গ্রাম-গৃহ ত্যাগ
করে উদ্বাসস্ত জীবনের দু;খ তাকে দগ্ধীভূত করে। তাই গুজরাট নগর পত্তন উপলক্ষে
কালকেতু গৃহহীন বুলান মন্ডলকে বলেছে।
শুন ভায়া
বুলান মন্ডল।
সন্তাপ
করিব দুর আস্যই আমার পুর
কনে দিব
কনক কুন্ডুল।
মুকন্দরাম
নিষ্পেষিত হয়েও স্বদেশে থাকতে পারতেন। কিন্তু তিনি দু:খ অতিক্রম করে জীবনে
সুখসন্ধানে প্রয়াসী ছিলেন বলেই জন্ম ভুমি ত্যাগ করেছিলেন।
যে দিন
সতেক পায়
সে দিনে
তাহাই খায়
দেড়ি অর্থ
নাহি থাকে ঘরে।
যে দিন গরে
খাবার না থাকে সেদিন ফুল্লরা ধার করে চলায়। তাদের জীবনে দু;খ কষ্ট আছে সন্দেহ নেই।
কিন্তু দু:খময় জীবনকে অতিক্রম করার ক্ষেত্রে জীবন যুদ্ধে তারা অগ্রগামী সৈনিক
হিসেবে কাজ করেছে। কালকেতু শিকার করে, ফল্লুরা তা হাটে হাটে বিক্রি করে।
পশুগণের
ক্রন্দন অধ্যায়ে কবি প্রতীকের মাধ্যমে পশুদের জবানীতে তৎকালীন সমাজের দু:খময়
বর্ণনার মাধ্যমে চিত্রণ করেছেন।