নাটকের সংজ্ঞা,
প্রকারভেদ, বাংলা নাটকের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ।
নাটকে রস
উপলব্ধির বিষয়টি জড়িত বলে তাকে বলা হয় দৃশ্যকাব্য। সংস্কৃত আলঙ্কারিকদের মতে, নটক দৃশ্যকাব্য
এত কাব্যত্ব ও দৃশ্যত্ব বা অভিনয়ত্ব দু-ই থাকবে।
নানা ব্যক্তির
আচরিত কর্মের ানুকরণ করলে তাকে নাটক বলা যায়। রস-ভাব-ব্যন্জনা সহযোগে আনন্দদান নাটকের উদেদ্শ্য। নাট্যমঞ্চে আভিনেতাকর্তৃক
নাচ্যাভিনয়ের মাধ্যমে গতিশীল মানবজীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়।
সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্র
অনুসারে কোন রচনায় দেবতা, মুনিঋষি, রাজা, গৃহস্থ ইত্যাদির আচরিত কর্মের অনুকরণকে নাট্য
বলা হয়। অন্য একটি সংজ্ঞায় বলা হয়েছে সুখ-দু;খযুক্ত
মানুষের যে স্বভাব আঙ্গিকাদি অভিনয়ের সাহায্যে
প্রকাশ করা হয় তার নাম নাটক।
নাটকের শ্রেণি
বিভাগ:
বিষয়বস্তুর
দিক থেকে নাটককে পধনত তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন
১. পৌরণিক
নাটক, ২, ঐতিহাসিক নাটক, ৩. সামাজিক নাটক।
বাংলা নাটকের উৎপত্তি
সতের আঠার
শতকে নেপাল রাজদরবারের কবিগণের রচিত পৌরাণিক
নাটকগুলোর মধ্যে এদশীয় যাত্রার পালার পরিচয় পাওয়া যায়। আঠার শতকের শেষদিকে নেপালে বাংলা
নাটক রচিত ও অভিনীত হলেও বাংলা নাট্যসাহিত্যের
ইতিহাসে এসর একটা কৌতূহল সৃষ্টি করা ছাড়া অন্য কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে নি।
বাংলা নাচকের প্রথম অভিনয় হয় ১৭৯৫ সালে।
বাংলা মৌলিক
নাটক রচনার সূত্রপাত হয় ১৮৫২ সালে। যোগেন্দ্রটন্্র গুপ্তের ‘কীর্তিবিলাস’, তারাটরণ
শিকদারের ‘ভদ্রার্জুন’ এই বৎসরে প্রকাশিত নাটক।
মাইকেল মধুসূদনই (১৮২৪-৭৩ খৃ:) সংস্কৃত প্রভাব বর্জন করে সর্বপ্রথম নাটক রচনা করেন। তাঁর প্রথম নাটক “শর্মিষ্ঠা” (১৮৫৯) মহাভারতের কাহিনী অবলম্বনে রচিত।
বাংলা নাটকের এ আবির্ভাবের সময়কালকে আদি, মধ্য ও আধুনিক নামে তিনটি যুগে ভাগ করা যেতে পারে। ১৭৯৫ হতে ১৮৭২ পর্যন্ত “আদি যুগ, ১৮৭৩ হতে ১৯৮০ পর্যন্ত “মধ্যযুগ” এবং ১৯০০ হতে বর্তমান পর্যন্ত “আধুনিক যুগ” বলে ধরে নেয়া যায়।
বাংলা নাটকের উদ্ভব দুইশত বৎসরেরও পূর্বে। পাশ্চাত্য রঙ্গমঞ্চের অনুকরণে বাংলা রঙ্গমঞ্চ স্থাপিত হওয়ার ফলেই বাংলা নাটক বিদেশী নাটকের মৌলধর্ম, অবলম্বন করেই আত্মপ্রকাশ করেছে। সংস্কৃত ও ইংরেজী নাটকের অনুবাদের মধ্যদিয়েই বাংলা নাটকের সূচনা দেখা দিয়েছিল। বাংলা নাটকের এ আবির্ভাবের সময়কালকে আদি, মধ্য ও আধুনিক নামে তিনটি যুগে ভাগ করা যেতে পারে। ১৭৯৫ হতে ১৮৭২ পর্যন্ত “আদি যুগ, ১৮৭৩ হতে ১৯৮০ পর্যন্ত “মধ্যযুগ” এবং ১৯০০ হতে বর্তমান পর্যন্ত “আধুনিক যুগ” বলে ধরে নেয়া যায়।
বাংলা নাটকের উদ্ভব ও বিকাশ
আধুনিক বাংলা নাটকের বিকাশে পাশ্চাত্য বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যের ভূমিকা সবিশেষ। উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাবে যে নবীন জীবানানুভব শিক্ষিত বাঙালিকে স্পর্শ করেছিল এবং যে নবজাগরণের সূচনা ঘটেছিল, বাংলা সাহিত্যের ক্ষেত্রে তার অন্যতম প্রকাশ ওই সময়ের প্রহসন; যার যথার্থ পরিণতি- বাংলা নাটক। উনিশ শতকের এক দ্বন্দ্বক্ষুদ্ধ পরিবেশে বাংলা নাট্যমঞ্চের বিকাশের ধারাবাহিকতায় জন্ম নিল আধুনিক বাংলা নাটক। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে প্রথম বাংলা নাটকের অভিনয় হয় ১৭৯৫ সালের ২৭শে নভেম্বর তারিখে। হেরাসিম লেবেদেফ, তার ভাষা- শিক্ষক গোলকনাথ দাসের সাহায্যে, ‘ছদ্মবেশ’ (The disguise) নামক ইংরেজি থেকে অনূদিত নাটকের পাশ্চাত্য ধাঁচের মঞ্চায়ন করেন। ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে হিন্দু থিয়েটারে ও ১৮৩৫ সালে শ্যামবাজারের নবীনচন্দ্র বসুর নিজ বাড়িতেও বিলিতি ধরনের রঙ্গমঞ্চের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়। তবে ১৮৫৭ সালে জানুয়ারি মাসে অনুবাদ নাটকের পরিবর্তে নন্দকুমার রায়ের ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলা’ প্রথম বাংলা নাটক হিসাবে অভিনীত হয়। এ পর্যায়ের নাটকের মধ্যে আরও উল্লেখ্য ১৮৫৭ সালে রামজয় বসাকের বাড়িতে অভিনীত রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’। বাংলা নাটকের ইতিহাসে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটে পাইকপাড়ার রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ এবং রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহের বেলগাছিয়া বাগান বাড়িতে। স্থাপিত নাট্যশালায়। ১৮৫৮ সালে ‘রত্নাবলী’ নাটক দেখতে এসে সদ্য মাদ্রাজফেরত মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর মান দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হন এবং তার ফলস্বরূপ বাংলা সাহিত্য তাঁর হাত থেকে পেয়ে যায় প্রথম সার্থক বাংলা নাটক ‘শর্মিষ্ঠা’। মধুসূদনের মেধাস্পর্শে বাংলা নাটকের বিষয়, সংলাপ, আঙ্গিক মঞ্চায়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। নবজাগ্রত বাঙালির প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠা এই নাট্যধারা ‘নব নাটক’ হিসেবে সবিশেষ পরিচিত। মধুসূদন, দীনবন্ধু এই সব নাটককে করে তুললেন অনেক বেশি রুচিসম্মত ও নান্দনিক। এরই ধারাবাহিকতায় গিরিশচন্দ্র ঘোষ, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় প্রমুখ নাট্যকারের আবির্ভাব ঘটে বাংলা নাটকের অঙ্গনে; বিকশিত হতে থাকে বাংলা নাট্যধারা। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নিজস্ব তত্ত্ব ও আঙ্গিককে-নিরীক্ষার প্রয়োগ ঘটিয়ে বাংলা নাটকে যোগ করেন বিশ্বমানের স্বাতন্ত্র্য। বিশ শতকের সাহিত্যে অমোঘ প্রভাব বিস্তারকারী দুই বিশ্বযুদ্ধ এসময়ের নাটককে নতুন চিন্তা ও আঙ্গিকে সমৃদ্ধ করে তুলেছিল। এরই সঙ্গে রুশ বিপ্লব, ভারতবর্ষ জুড়ে ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী কর্মকাণ্ড, বিশ্বব্যাপী মার্কসবাদের বিস্তার, তেতাল্লিশের মন্বন্তর, দেশভাগ, শ্রেণিসংগ্রামচেতনা, শ্রেণিবিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা প্রভৃতি বাংলা নাটকে সূচনা করে গণনাট্যের ধারা। বিজন ভট্টাচার্য, উৎপল দত্ত প্রমুখ নাট্যকার এই নতুন ধারার নাটক নিয়ে জনমানুষের কাছে পৌঁছাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন। এর কাছাকাছি সময়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, পূর্ববাংলার সাধারণ মানুষের ওপর নেমে আসা শোষণ ও বৈষম্য, এই অঞ্চলের নাট্যকারদেরও গণনাট্রের চেতনায় অনুপ্রাণিত করে তোলে। সেইসঙ্গে, পূর্ববাংলায় একের পর এক আন্দোলনের পটভূমি স্বাধীনতার পূর্ব থেকেই বাংলাদেশের নিজস্ব নাট্যধারা সৃষ্টির উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে দেয়।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বাংলা নাটকের নাম নিম্নরূপ : রামনারায়ণ তর্করত্নের ‘কুলীনকুলসর্বস্ব’, মধুসূদন দত্তের ‘কৃষ্ণকুমারী’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’, দীনবন্ধু মিত্রের ‘নীলদর্পণ’, ‘সধবার একাদশী’, মীর মশাররফ হোসেনের ‘জমিদার-দর্পণ’, গিরিশচন্দ্র ঘোষের ‘প্রফুল্ল’, রীবন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিসর্জন’, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘সাজাহান’, বিজন ভট্টাচার্যের ‘নবান্ন’, তুলসী লাহিড়ীর ‘ছেঁড়াতার’, উৎপল দত্তের ‘টিনের তলোয়ার’ প্রভৃতি। বাংলা নাটকের এই সমৃদ্ধ উত্তরাধিকার বহন করে বাংলাদেশেরও একটি নিজস্ব নাট্যধারা’ ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাটকের কথা স্মরণ করা যেতে পারে; যেমন : নুরুল মোমেনের ‘নেমোসিস’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘বহিপীর’, মুনীর চৌধুরীর ‘চিঠি’, আনিস চৌধুরীর ‘মানচিত্র’, সাইদ আহমদের ‘মাইলস্টোন’, ‘কালবেলা’, মমতাজউদ্দীন আহমদের ‘রাজা অনুস্বারের পালা’, ‘কি চাহ শঙ্খচিল’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়’, ‘নূরলদীনের সারাজীবন’, জিয়া হায়দারের ‘শুভ্র সুন্দর’, ‘কল্যাণী আনন্দ’, ‘এলেবেলে’, আবদুল্লাহ আল মামুনের ‘সুবচন নির্বাসনে’, ‘এখন দুঃসময়’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’, মামুনুর রশীদের ‘ওরা কদম আলী’, ‘গিনিপিগ’, সেলিম আল দীনের ‘কিত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, এম এম সোলায়মানের ‘তালপাতার সেপাই’, ‘ইংগিত’ প্রভৃতি।
নাটক হিসাবে সাজাহান নাটকের
সার্থকতা
সাজাহান নাটকের চরিত্রগুলোর
পরিটিতি
ট্রাজিডি হিসেরে ইডিপাস
নাটকের সফলতা আলোচনা কর
বাহ। চমৎকার লিখেছেন।
ReplyDelete