Thursday, March 30, 2017

পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দক্ষনিকতা ও রুমান্টিকতা হ্রাস পেয়ে সাধরন মানুষের যে জীবন চিত্র অংকন করেছেন তা আলোচনা কর।

পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দক্ষনিকতা ও রুমান্টিকতা হ্রাস পেয়ে সাধরন মানুষের যে জীবন চিত্র অংকন করেছেন তা আলোচনা কর।
রবীন্দ্রনাথকে বহুভাবে আবিষ্কার করবার কলা-কৌশল বাঙালি বহুদিন থেকে কখনো এককভাবে কখনো সামগ্রিকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে। অব্যাহত প্রচেষ্টা ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথকে আরো মহিমান্বিত ঔজ্জ্বল্য দান করেছে।  রবীন্দ্রনাথ সর্বকালে সবসময়ই আধুনিক। স্মৃতিকে জীবন্ত করে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্বপ্রকৃতির মাঝে আমরা বারবার রবীন্দ্রনাথকে খুঁজে পাই। সর্বপ্রাণবাদের দ্যোতনা তাঁর চিন্তা ও সাধনার মধ্যে প্রকাশ পেয়েছে।
প্রকৃতি থেকে শিশুচিত্তের যে আনন্দ জয় করা যায় সেদিকে রবীন্দ্রনাথ বারবার তাঁর দৃষ্টিকে প্রসারিত করেছেন।
পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের মধ্যে আত্মভোলা শিশুও যে প্রকৃতির মায়ায় ঘর থেকে বের হয়ে এসে আর গৃহে ফিরতে চায়না তার মনের ভাবকে বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গে তিনি উপস্থাপন করেছেন।
শিশুদের মনের জগতকে তিনি যেন নিজের মানসচক্ষু দিয়ে দেখতেন_
 তুমি বলো তিনু প্রশ্রয় পায় আমার কাছে
 তাই রাগ কর তুমি।

 ওকে ভালবাসি,

 তাই ওকে দুষ্টু বলে দেখি,

 দোষী বলে দেখি নে।
 পুনশ্চ কাব্যগ্রন্থের কবিতাসমূহ পাঠ করলে রবীন্দ্রনাথের জীবনের শুরু থেকে যৌবনের যে জয়গান এবং কবিতার রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয়।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের অবিচ্ছিন্ন চিন্তা ভাবের খোরাক যুগিয়েছেন। প্রেম প্রকৃতি বিষয়ক প্রত্যক্ষ বাস্তবতার আলোকে তিনি গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে প্রতিটি কবিতার সারমর্ম আপন মহিমায় পাঠকের জন্য উপস্থাপন করেছেন। 
'সহযাত্রী' কবিতাটির কয়েকটি চরণ এখানে তুলে ধরা হলো:
 . সুশ্রী নয় এমন লোকের অভাব নেই জগতে
  মানুষটি তার চেয়েও বেশি, অদ্ভুত।

 সারমর্ম ব্যাখ্যা করলে কবিতাটি বেশ অর্থবোধক।

 . বিবিধ রচনায় ফাঁক থাকে

 থাকে কোথাও অস্ফুটতা
 পুনশ্চ গ্রন্থে 'বাঁশি' একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা।
 . কিনু গোয়ালার গলি/দোতলা বাড়ির/ লোহার-গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর/ পথের ধারেই

 . বেতন পঁচিশ টাকা/ সদাগরি আপিসের কনিষ্ঠ কেরানি/ খেতে পাই দত্তদের বাড়ি/ ছেলেদের পড়িয়ে/

 'বাঁশি' কবিতা পাঁচ স্তবকের বিষয়টিতে একেবারে জীবনঘনিষ্ঠ। ধলেশ্বরী নদী তীরে পিসিদের গ্রাম/তাঁর দেওরের মেয়ে/অভাগার সাথে তার বিবাহের ছিল ঠিকঠাক/লগ্নশুভ, নিশ্চিত প্রমান পাওয়া গেল/সেই লগ্নে এসেছি পালিয়ে/মেয়েটা তো রক্ষে পেলে/আমি তথৈবচ।
 সাহসহীনতার কারণে এবং মনের দৈন্যের কারণেই হোক নায়ক চরিত্রের ভেতর পলায়নবৃত্তি মনোভাব বারবার উঠে এসেছে। দৃঢ়তা নেই। তারপর সময় পারিপাশ্বর্িকতার ছাপ এখানে পরিস্ফুট। জগতের সকল পূর্ণতা থেকে যেন সে বহুদূরে। এই যে একজন মানুষের মনের দৈন্য সবকিছু না পাওয়ার যে বেদনা তা কবিতায় ধ্রুপদী ঢংয়ে এগিয়েছে পাঠকের হৃদয়ের ভেতরে। মন যেন ঢেউ তোলা স্পন্দন। আকাঙ্ক্ষার যেন কোন শেষ নেই।

No comments:

Post a Comment